প্রতিবার ইওরোপ টুরের আগে কোনো না কোনো ঝামেলা হবেই। এবারও হল। আগের গুলা পরে বলছি। এইবারেরটা আগে বলি।
যাত্রার শুরুর সময় থেকেই দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। সন্ধায় খবর এলো, ফ্লাইট
ডিলেইড। প্রায় দুই ঘন্টা। বাসায় বসে থাকতে থাকতে রিপভ্যানউইঙ্কেল অবস্থা ।
চরম অনিচ্ছায় অ্যায়ারপোর্ট হাজির হলাম। সেখানেও অপেক্ষা। ঢাকা
অ্যায়ারপোর্টের কোনাকান্ছি মুখস্ত হয়ে গেল। তখনই ধারনা করতে পারছিলাম এই
চাঁপটা যেয়ে পড়বে ট্রান্জিটের ওপর।
কাতার অ্যায়ারওয়েজ সাধারনত এই জাতীয় সমস্যাগুলো চমৎকার ভাবে সামলায়। আরাই
ঘন্টার ট্রান্জিটে দুই ঘন্টার ডিলেইড- বড় ধরনের চাঁপ অপেক্ষা করছে বুঝতে
পারছিলাম।
ঘটলও তাই । কাতার অ্যায়ারপোর্টে প্লেন ল্যান্ড করার সঙ্গে সঙ্গে একজন এসে বললেন- আর ইউ মিস্টার শামীম ?
আমি ওপর-নিচ মাথা নেড়ে শেষ করার আগেই বললেন -ফলো মি।
তারপর ইউসাইন বোল্টকে পিছনে ফেলে ছুটলেন এই মাথা থেকে ওই মাথা। আমার পুরো
পরিবার তখন টাইসন গেই। নোরা, জারা, অরোরা, মুন আর আমি সবাই তখন প্রৃথিবীর
সেরা অ্যায়ারপোর্টের দৈঘ্র্যের ওপর প্রচণ্ড বিরক্ত।
বিশ মিনিট একটানা দৌড়ানোর পর হিন্দী সিনেমার মতো প্লেনে উঠলাম আমরা।
হিন্দী সিনেমার মতো মানে, পুরো একটা আস্ত প্লেন যাত্রী বোঝাই করে দাঁড়িয়ে
আছে আমাদের জন্য। খুবই লজ্জা লজ্জা লাগল। প্লেন ভর্তি যাত্রীরা আমাদের দিকে
তাকিয়ে আছে, আমারা পাঁচজন সিটে গিয়ে বসলাম। সঙ্গে সঙ্গে প্লেন নড়তে শুরু
করল।
তখন হঠাৎ মাথায় এলো বিষয়টা–আমাদের লাগেজ? আমাদেরকেই যদি এইভাবে দৌড়ে এসে প্লেনে উঠতে হয় আমাদের লাগেজ কিভাবে আসবে?
পরক্ষণেই আবার মনে হল–ধুর বোকাদের মতো কীসব আবোল তাবোল ভাবছি।
প্লেন ল্যান্ড করল কোপেনহেগেন অ্যায়ারপোর্টে। ডেনমার্ক।
ছয় নাম্বার বেল্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছি তিনটা লাগেজ আসার পর বাকিগুলার আর
দেখা নাই। খুব চিন্তায় পড়ে গলাম। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে এখন কী করি।
ব্যাগজ ক্লেইম কাউন্টারে জানাতেই লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে গেল লোকটা। উই আর
ভেরি সরি-জাতীয় কিছু কথা বলে কম্পিটার ঘাটাঘাটি করে জানালো-লাগেজ তিনটি
দোহা থেকেই বিমানে ওঠানো সম্ভব হয় নাই।
-তাই ? তাহলে এখন কী করণীয় ? আমাদের লাগেজ হারিয়ে গেল?
শুরু হল সবার আহাজারি। আমাদের ভ্রমণ জীবনে এই ঘটনা এবারই প্রথম। আমরা যতটাই চিন্তিত ওই লোক ততটাই কাচুমাচু ।
-কোনো চন্তা করবেন না। আপনারা যেখানে যাচ্ছেন চলে যান, আমরা আপনাদের ঠিকানা মতো পৌঁছে দেব।
-বলে কি এই লোক, কোনো জিনিস হারলে আবার ফেরত পাওয়া যায় নাকি? আমাদের আহাজারি আর কমে না।
ঠিকানা-টিকানা দিয়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত হ্রদয় নিয়ে অ্যায়ারপোর্টের বাইরের
দিকে হাটতে শুরু করব তখনই আমাদের দিকে একটা খাম বাড়িয়ে দিলেন তিনি।
-এখানে এক হাজার সাতশ ডেনিস ক্রোনার আছে। কাতার অ্যায়ারওয়েজ এই অনাকাঙখীত ঘটনার দায় হিসেবে টাকাটা আপনাদের দিচ্ছে।
-বলেন কী! কেন! আমিতো অবাক। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় বিশ হাজার টাকা।
-আপনাদের যদি জরুরী কিছু কিনতে হয়, তাই দিচ্ছে।
-বলেন কী, লাগেজ কি আর দিবেন না তাহলে। মুখ ফসকে বের হয়ে গেল কথাটা। সবাই
হেসে উঠল। মনের আনন্দে টাকা নিয়ে বের হয়ে এলাম। পাশ থেকে মুন বলল, ওদেরকে
বলনা ওরা চাইলে লাগেজ আরও কিছুদিন রেখে দিক।
দুই দন লাগেনি, পরদিন বিকেলেই ফোন এল, আপনাদের লাগেজ নিয়ে দশ মিনিটের মধ্যে আমরা বাসায় আসছি।
ধন্যবাদ কাতার অ্যায়ারওয়েজ । কৃতজ্ঞতা বিনয়, ভদ্রতা আর বিশ্বাসের প্রতি।
-শামীম শাহেদ